তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের নৈতিকতা
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের নৈতিকতা
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের নৈতিকতা ভূমিকা
নৈতিকতা হলো এমন এক ধরনের মানদণ্ড, যা মানুষের আচরণ, কাজ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সঠিক ও ভুলের পার্থক্য নির্ধারণে সহায়তা করে। মানবজীবনে ধর্ম ও নৈতিকতা পরস্পরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তবে অনৈতিকতা আর বেআইনিতা সব সময় এক বিষয় নয়। অনেক কাজ অনৈতিক হলেও আইনবিরুদ্ধ নাও হতে পারে, কিন্তু প্রতিটি আইনবিরুদ্ধ কাজই অনৈতিক।
সাম্প্রতিক সময়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে নানা ধরনের অনৈতিক ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে। এ কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রণয়ন করছে। যেমন—সরাসরি কাউকে গালাগালি করলে অনেক সময় শাস্তি নাও হতে পারে, কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একই কাজ করলে তা সাইবার অপরাধ হিসেবে শাস্তিযোগ্য হতে পারে। এ ধরনের অপরাধকেই বলা হয় তথ্যপ্রযুক্তি-ভিত্তিক অপরাধ বা সাইবার ক্রাইম।
বর্তমানে প্রায় প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত। তাই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের নীতি ও নৈতিকতা সম্পর্কে সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। নৈতিকতার অভাব একজন মানুষকে ধীরে ধীরে অন্যায় ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এজন্য সকল ব্যবহারকারীর জন্য তথ্যপ্রযুক্তির নৈতিক ব্যবহার সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন ও তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা অপরিহার্য।
Read more:CPA Marketing Best Practices
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের দশটি নৈতিক নির্দেশনা
১৯৯২ সালে কম্পিউটার ইথিকস ইনস্টিটিউট কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য দশটি গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক নির্দেশনা প্রদান করে। এগুলো হলো—
কম্পিউটার ব্যবহার করে কখনো অন্যের ক্ষতি করা যাবে না।
অন্যের কম্পিউটার-সংক্রান্ত কাজে অনধিকার হস্তক্ষেপ করা যাবে না।
অন্যের ব্যক্তিগত ফাইল বা তথ্য অনুমতি ছাড়া দেখা বা ব্যবহার করা যাবে না।
চুরি বা প্রতারণার উদ্দেশ্যে কম্পিউটার ব্যবহার করা যাবে না।
মিথ্যা তথ্য তৈরি বা প্রচারে কম্পিউটার ব্যবহার করা যাবে না।
লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যার ব্যবহার বা কপি করা যাবে না।
অনুমতি ছাড়া অন্যের কম্পিউটার রিসোর্স ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যের কাজ নিজের নামে প্রকাশ করা যাবে না।
তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের আগে সমাজের ওপর এর সম্ভাব্য প্রভাব বিবেচনা করতে হবে।
কম্পিউটার ব্যবহারের সময় অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও মানবিকতা প্রদর্শন করতে হবে।
সাইবার ক্রাইম কাকে বলে এবং এর প্রকারভেদ
কম্পিউটার, ইন্টারনেট বা মোবাইল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে সংঘটিত যেকোনো অপরাধকে সাইবার ক্রাইম বলা হয়। বর্তমানে ইন্টারনেটভিত্তিক কিছু সাধারণ অপরাধ হলো—
১. হ্যাকিং
অনুমতি ছাড়া কোনো কম্পিউটার সিস্টেম, নেটওয়ার্ক বা ডেটাবেসে প্রবেশ করাকে হ্যাকিং বলা হয়। এতে তথ্য চুরি, পরিবর্তন বা ধ্বংস করা হতে পারে। যারা এ কাজে জড়িত, তাদের হ্যাকার বলা হয়।
২. ফিশিং
ইমেইল বা মেসেজের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে ভুয়া ওয়েবসাইটে প্রবেশ করিয়ে কৌশলে তার পাসওয়ার্ড, পিন নম্বর, ক্রেডিট কার্ড বা ব্যাংক সংক্রান্ত তথ্য হাতিয়ে নেওয়াই ফিশিং।
৩. স্প্যামিং
অনাকাঙ্ক্ষিত বা বিরক্তিকর ইমেইল ও মেসেজ প্রেরণকে স্প্যামিং বলা হয়। এ ধরনের কাজের মাধ্যমে অনেক সময় প্রতারণামূলক লিংক পাঠানো হয়।
৪. সফটওয়্যার পাইরেসি
লাইসেন্স বা স্বত্বাধিকারীর অনুমতি ছাড়া সফটওয়্যার কপি, ব্যবহার বা পরিবর্তন করাকে সফটওয়্যার পাইরেসি বলা হয়।
Read more:ফ্রিল্যান্স ওয়েব ডিজাইনার হওয়া কতটা কঠিন?
৫. প্লেজিয়ারিজম
অন্যের লেখা, গবেষণা বা সৃজনশীল কাজ হুবহু বা আংশিক পরিবর্তন করে নিজের নামে প্রকাশ করাকে প্লেজিয়ারিজম বলা হয়। যথাযথ সূত্র উল্লেখ না করাও এর অন্তর্ভুক্ত।
সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে সাইবার আইন
সাইবার অপরাধ দমনে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬
এই আইনের ৫৭(১) ধারা অনুযায়ী, ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা, অশালীন বা মানহানিকর তথ্য অনলাইনে প্রকাশ করলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।
পর্নোগ্রাফি আইন, ২০১২
ইন্টারনেট বা ডিজিটাল মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি সরবরাহ করলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড ও ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান আছে।
Read more:ডিজিটাল মার্কেটিং থেকে কিভাবে আয় করা যায়?
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮
এই আইনে উল্লেখযোগ্য অপরাধসমূহ হলো—
অবৈধভাবে কম্পিউটার সিস্টেমে প্রবেশ
তথ্য চুরি, বিকৃতি বা ধ্বংস
ডিজিটাল মাধ্যমে প্রতারণা ও জালিয়াতি
রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করে এমন অপপ্রচার
অনলাইনে মানহানি, হুমকি ও হয়রানি
আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সাইবার আক্রমণ
এসব অপরাধের জন্য বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানার বিধান রয়েছে।
উপসংহার
উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অপব্যবহার ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নৈতিকতা, বিবেক ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি। সচেতন ও দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলেই আমরা তথ্যপ্রযুক্তির সুফল ভোগ করতে পারব এবং সাইবার অপরাধ থেকে নিজেকে ও সমাজকে রক্ষা করতে সক্ষম হব।

.jpeg)
.jpeg)
.jpeg)
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url